মহামানব বৌদ্ধ ধর্মীয় বাণী প্রদান করছেন। |
বুদ্ধের জন্ম,
বুদ্ধত্ব লাভ
ও
মহাপরিনির্বাণ—এ
তিনটি
ঘটনাই
বিশ্বের ইতিহাসে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে
অভিহিত। এই
শুভ
তিথিকে
কেন্দ্র করেই
আজ
বিশ্বের বৌদ্ধরা এবং
অহিংস
ও
শান্তিবাদী মানুষেরা বুদ্ধবাণীকে স্মরণ
করছে।
বর্তমান সময়ে
বিশ্ব
প্রেক্ষাপটে ‘বৌদ্ধ
মানবতাবাদ ও
সমাজ
সমীক্ষা’ একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ,
বিশ্ব
মানবতা
আজ
ভূলুণ্ঠিত এবং
বিশ্বশান্তি আজ
বিপর্যস্ত। বিশ্ব
মানবসমাজ আজ
নানা
দ্বন্দ্ব-সংঘাতে
খণ্ডিত
ও
ক্ষতবিক্ষত। বিশ্বের কোথাও
শান্তি
পরিলক্ষিত হচ্ছে
না।
দেশ,
সমাজ
ও
বিশ্বের সব
জায়গায় যেন
অস্থিরতা ও
উন্মাদনা। মানুষ
শান্তির জন্য
যত
বেশি
ছোটাছুটি করছে,
তার
চেয়ে
বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত করছে
আপন
মনের
লোভ,
দ্বেষ,
মোহ
ও
প্রতিহিংসার প্রতিযোগিতায়। তা
ছাড়া
একে
অপরকে
ধ্বংস
করছে
ক্ষমতা
গ্রহণের প্রতিযোগিতা ও
রাজ্য
বিজয়ের আগ্রাসনে।
আজ
থেকে
আড়াই
হাজার
বছর
আগে
গৌতম
বুদ্ধের জন্ম
ও
বুদ্ধত্ব লাভের
মধ্য
দিয়ে
পৃথিবীর বুকে
এমন
একটি
মানবধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে
ধর্মের
বাণী
সম্পূর্ণ অহিংস
ও
মানবতাবাদী এবং
যা
বিশ্বের জীবজগৎ
ও
বিশ্বের সকল
মানবগোষ্ঠীর কল্যাণকে আহ্বান
জানায়। তাই
বৌদ্ধধর্ম একটি
সর্বজনীন অহিংস,
সাম্য
ও
মানবতাবাদী ধর্ম।
এ
ধর্মের
বাণীগুলো শাশ্বত
এবং
সম্পূর্ণ মানবিক
আবেদনে
পরিপূর্ণ। সুশীল
বিশ্ব
মানবসমাজ গঠনের
জন্য
অপরিহার্য। এখানে
ধর্মের
বাড়াবাড়ি নেই।
নেই
কোনো
ধর্ম,
বর্ণ,
জাতি,
গোত্র
তথা
সমাজের
নানা
শ্রেণীর মানুষের মধ্যে
কোনো
রকম
বৈষম্য। মূলত
মানবতা
এবং
মানবিক
গুণাবলির বহিঃপ্রকাশই এই
ধর্মের
বিশেষত্ব।
বুদ্ধ
ও
বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী
মানুষের কৌতূহল
শুধু
আজকের
নয়,
হাজার
হাজার
বছর
আগেও
ছিল।
গ্রিক
দার্শনিকেরা বুদ্ধ
সম্পর্কে খুবই
ভাবতেন
এবং
বুদ্ধের ধর্ম-দর্শন ও সমাজচিন্তা নিয়ে
গবেষণা
করতে
খুবই
উৎসাহিত হতেন।
তাই
মহামতি
বুদ্ধের দর্শন,
জীবনচেতনা ও
নীতিবাদ শুধু
ভারতীয় নয়,
এমনকি
গ্রিক
কিংবা
পাশ্চাত্য দর্শনকেও গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ধর্মীয় জীবন
প্রচারের শুরুতেই মানবকল্যাণে মহামতি
বুদ্ধের কণ্ঠে
মহাপ্রেমের মহাবাণী উৎসারিত হয়েছিল। বুদ্ধ
বুদ্ধত্ব লাভ
করার
পর
পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের উদ্দেশ
করে
বলেছিলেন, ‘হে
ভিক্ষুগণ, বহুজনের হিতের
জন্য,
বহুজনের সুখ
ও
মঙ্গলের জন্য
এমন
ধর্ম
প্রচার
করো,
যে
ধর্মের
আদি,
মধ্য
এবং
অন্তে
কল্যাণ;
সেই
অর্থযুক্ত, ব্যঞ্জনযুক্ত পরিপূর্ণ, পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশিত করো।’
সুতরাং
এ
বাণী
থেকেই
ধর্ম
প্রচারের ক্ষেত্রে মহামানব বুদ্ধের মহত্ত্ব ও
বিশালতার পরিচয়
পাওয়া
যায়।
ইতিহাস
পর্যালোচনা করলে
দেখা
যায়
যে
বুদ্ধের দুটি
বাণী
বিশ্ববাসীকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট
ও
অনুপ্রাণিত করেছিল। সে
দুটি
বাণীর
মধ্যে
একটি
হচ্ছে
সদিচন্তা ও
সদ্কর্ম সম্পর্কিত-শীল,
সমাধি
ও
প্রজ্ঞাময় জীবন
গঠন
করা।
আর
অন্যটি
হলো
আত্মনির্ভরশীল হওয়া।
তিনি
সব
সময়
তাঁর
শিষ্যদের বলতেন,
‘হে
ভিক্ষুগণ, তোমরা
মুক্তির জন্য
পরনির্ভরশীল হয়ো
না,
অন্যের
মুখাপেক্ষী হয়ে
থেকো
না,
নিজেই
নিজের
প্রদীপ
হও,
নিজে
নিজের
শরণ
গ্রহণ
করো।’
জগতে
এর
চেয়ে
নিজেকে
তৈরি
করার
ইচ্ছা
ও
কর্ম
স্বাধীনতার মহৎ
বাণী
আর
কী
থাকতে
পারে?
বুদ্ধের এ
বাণীর
মধ্যেই
রয়েছে
মহামানবতাবাদ ও
সুন্দর
স্বাবলম্বী সমাজ
গঠনের
উত্তম
শিক্ষা।
বুদ্ধের শিক্ষায় অধ্যাত্ম জীবনের
মানুষের মুক্তি
যেমন
কাম্য,
তেমনি
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও
স্বাচ্ছন্দ্যবোধের কথাও
অধিক
গুরুত্ব পেয়েছে। সামাজিক মর্যাদা অথবা
শিক্ষামূলক গুরুত্বকে বুদ্ধ
কখনো
খাটো
করে
দেখেননি। কারণ,
বুদ্ধ
জানতেন,
প্রকৃত
শিক্ষাই মানুষের মনকে
বড়
করে
এবং
ভালো-মন্দ বিচার করার
শক্তি
দেয়।
বুদ্ধ
আরও
জানতেন,
জাগতিক
ইন্দ্রিয় ভোগের
উপাদান
অথবা
ভোগবাদের অত্যুচ্চ আগ্রাসন মানুষকে কখনো
সমাজ
জীবনের
সুখ
কিংবা
জীবন-যন্ত্রণার মুক্তি প্রদান করতে
পারে
না।
আজ
পৃথিবীব্যাপী যে
পুঞ্জীভূত ক্রোধ,
দুঃখ
সহিংসতা ও
জিঘাংসা, তা
দেখলে
মনে
হয়
আজ
এ
মুহূর্তেই বুদ্ধের অহিংস
বাণীর
প্রয়োজন। বুদ্ধ
চেয়েছিলেন মানবসমাজকে সর্ববিধ দুঃখের
হাত
থেকে
উদ্ধার
করতে।
পৃথিবীতে তিনিই
একজন
সাধারণ
ধর্ম
প্রবক্তা, যিনি
দেশ
ও
জাতির
গণ্ডি
অতিক্রম করে
সমগ্র
বিশ্বের, সমগ্র
জীবজগতের মানুষের দুঃখ,
বেদনা,
অধিকার,
মুক্তি
এবং
জীবন-যন্ত্রণার কথা ভেবেছিলেন।
সুতরাং
আজকের
বিশ্বের রাজনীতিতে অথবা
বিশ্বজুড়ে যখন
আগ্রাসনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব,
ঠিক
তখনই
এশিয়া,
ইউরোপ,
আমেরিকা কিংবা
এ
উপমহাদেশের ক্ষমতা,
সার্বভৌমত্ব, ধর্ম
ও
রাষ্ট্র পরস্পরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আমাদের
চিন্তার মুক্তির প্রশ্নটি নিয়ে।
আড়াই
হাজার
বছর
আগেও
মহামানব বুদ্ধ
সেই
সামগ্রিক মুক্তিটি চেয়েছিলেন সকলের
মুক্তির জন্য।
এমনকি
মহামতি
বুদ্ধ
অধ্যাত্ম বা
বৈরাগ্যজীবনের মুক্তির পাশাপাশি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং
বিশ্বজনীন মুক্তি
ও
নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। বস্তুত
বুদ্ধের এই
মুক্তিদর্শন আধ্যাত্মিক জগৎ,
সামাজিক ও
অর্থনৈতিক পূর্ণতাসহ জাগতিক
সকল
প্রকার
সুখ
ও
স্বাচ্ছন্দ্যকে পূর্ণ
করে।
তথ্য সংগ্রহে: তারা, খাগড়াছড়ি।
No comments:
Post a Comment